ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে করণীয়
ডেঙ্গু একটি ভাইরাস জ্বর। এডিস মশা এ ভাইরাসের একমাত্র বাহক। এটির কামড়েই ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে। সাধারণত ভোরে ও সন্ধ্যায় এ মশা কামড় দেয়। প্রতি বছর শীত শুরুর হওয়ার আগে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত (১২ নভেম্বর ২০২৪) এক প্রেস রিলিজে জানানো হয়, নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ৭৪৩ এবং মারা গিয়েছে ৭জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ এবং মারা গিয়েছেন ১হাজার ৭০৫জন। অন্যদিকে চলতি বছরে (২০২৪) এখনো পর্যন্ত (১৩ নভেম্বর) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৪ হাজার ৮০০ এবং মারা গিয়েছেন ৩৬৭জন। ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে করণীয় যা যা আছে, এখনই সবগুলো বাস্তবায়ন করা হলে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব হবে।
আমাদের কল করুন +8801713-155200ডেঙ্গু জ্বর কি?
ডেঙ্গু একটি ভাইরাস জ্বর। এডিস মশার কামড়ে এ জ্বর হয়ে থাকে। সাধারণত ভোর ও সন্ধ্যায় এডিস মশা কামড় দিয়ে থাকে। মশা কামড়ের ৩ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে সাধারণত ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো দেখা দেয়।
ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো হলো:
শরীরে যদি এই উপসর্গগুলো দেখা যায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে:
- ১. ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০২ ডিগ্রি জ্বর।
- ২. জ্বর একটানা থাকতে পারে এবং ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে আবার আসতে পারে।
- ৩. শরীর ও মাথাব্যথা।
- ৪. চোখের পেছনে ব্যথা।
- ৫. চামড়ায় লালচে দাগ (র্যাশ)।
- ৬. বমি হওয়া ও খেতে না পারা।
- ৭. দাঁত মাজার সময় রক্ত পড়তে পারে।
- ৮. ক্লান্তি ভাব হতে পারে।
- ৯. কালো পায়খানা হতে পারে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসাধারণের করণীয়
ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে রাষ্ট্রের যেরকম দায়িত্ব আছে, একইভাবে জনসাধারণেরও কিছু করণীয় আছে। নিচে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে করণীয়গুলো তুলে ধরা হলো:
- মশারি ব্যবহার করা: এডিস মশা দিনের বেলা কামড় দেয়। তাই সম্ভব হলে দিনের বেলাও মশারি ব্যবহার করা।
- মশার স্প্রে করা: বাসাবাড়ি ও অফিসের আনাচ-কানাচে মশার স্প্রে করা। যেন এসব স্থানে কোনোভাবেই মশা লুকিয়ে থাকতে না পারে।
- মশানিরোধক জাল ব্যবহার করা: ঘরের দরজা, জানালা ও ভেন্টিলেটর ইত্যাদিতে মশানিরোধক জাল ব্যবহার করা। যেন ঘরে মশা ঢুকতে না পারে।
- ফুলহাতা জামা পরা: ফুলহাতা জামা পরা এবং হাত-পায়ে মোজা পরা। বাচ্চাদের ফুলহাতা জামা এবং হাত-পা মোজা পরানো। এতে মশার কামড় থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাওয়া যাবে।
- চারপাশ পরিষ্কার রাখা: বাসা ও অফিস-আদালতের চারপাশ পরিষ্কার রাখা। পরিত্যক্ত টিনের কৌটা, বোতল ও মাটির পাত্র ইত্যাদি সরিয়ে ফেলা।
- জমে থাকা পানি ফেলে দেওয়া: ফ্রিজের নিচে, এসির নিচে ও ফুলের টব ইত্যাদিতে জমে থাকা পানি ফেলে দেওয়া। কারণ এ জমে থাকা পানিতেই ডেঙ্গুর জীবানু বেশি জন্মায়।
ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা
যদি শরীরের তাপমাত্রা ১০০ থেকে ১০৬ ডিগ্রির মধ্যে থাকে এবং চোখের পেছনে ব্যথা হয়। তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে উপযুক্ত পরামর্শ নেওয়া। চিকিৎসা নেওয়ার পাশাপাশি নিচে উল্লেখিত কাজগুলো করা:
- প্যারাসিটামল খাওয়া (চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে)।
- পরিপূর্ণ বিশ্রামে থাকা।
- প্রচুর তরলজাতীয় খাবার অর্থাৎ ডাবের পানি, লেবুর শরবত, খাবার স্যালাইন ও ফলের রস খাওয়া।
- প্রতিদিন সর্বনিম্ন তিন লিটার পানি পান করা।
ডেঙ্গু হলে যা করা যাবে না
এমন কিছু কাজ আছে যেগুলো ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর করা উচিত নয়। নিচে এই কাজগুলো তুলে ধরা হলো:
- ভারী কাজ ও পরিশ্রম না করা।
- চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ সেবন করা উচিত নয়।
- অ্যাসপিরিন, ক্লোফেনাক ও আইবুপ্রোফেন এ জাতীয় ঔষধ সেবন না করা (তবে চিকিৎসকের পরামর্শ থাকলে ভিন্ন কথা)
- জ্বর কমে যাওয়ার পর অবহলো না করা (যদি রক্তচাপ কমে যায়, মাড়ি, নাক ও মলদ্বার দিয়ে রক্তপাত হয়)
- প্লাটিলেট নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়া (তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং যেসব খাবার খেলে প্লাটিলেট বাড়ে সেগুলো খাওয়া)
- পেঁপে পাতার জুস খেলে প্লাটিলেট বাড়ে, বিষয়টি চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রমাণিত নয়। তাই এ জাতীয় জুস পান না করা।
কখন হাসপাতালে যেতে হবে?
জ্বর হলেই অনেকে হাসপাতালে চলে যান এবং ডেঙ্গু পরীক্ষা করেন, এমন আতঙ্কিত হওয়া ঠিক নয়। নির্দিষ্ট কিছু অবস্থা রয়েছে যেগুলো পরিলক্ষিত হলে হাসপাতালে যেতে হয়। অবস্থাগুলো হলো:
- ক্যাটাগরি ‘এ’: ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ক্যাটাগরি বা ধরন রয়েছে। প্রথম ধরন হলো ‘এ’। ‘এ’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বাসায় নিয়ম মেনে চললেই ডেঙ্গু ভালো হয়ে যায়।
- ক্যাটাগরি ‘বি’: ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পরে যদি পেটে অতিরিক্ত ব্যথা ও বমি হয়, তাহলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ভালো। এছাড়াও যাদের ডায়াবেটিস, কিডনি ও লিভার ইত্যাদি সমস্যা রয়েছে তারা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে পারেন।
- ক্যাটাগরি ‘সি’: ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সারাদিনে ৩বারের বেশি বমি হলে, জ্বর নিয়ন্ত্রণে না এলে, পেট, মাথা ও চোখের পেছনে অসহ্য ব্যথা, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া এবং ৬ঘন্টা প্রস্রাব না হলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা।
ডেঙ্গুর ধরন জানার উপায়
কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা রয়েছে যা করলে সহজে ডেঙ্গুর ধরন জানা যায়। পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো হলো:
- ডেঙ্গু এনএস১ এন্টিজেন (NS1 Ag)
- ডেঙ্গু এনএস১ এন্টিজেন (NS1 Ag)
- ডেঙ্গু এনএস১ এন্টিজেন (NS1 Ag)
রোগীর অবস্থা যদি জটিল হয়, তখন আরও কিছু টেস্ট করতে হয়। একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক রোগীর অবস্থা বুঝে কোন টেস্ট করালে ভালো হবে সে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
ডেঙ্গু টেস্ট নেগেটিভ হলেও কি ডেঙ্গু হতে পারে?
অনেকের মনেই এ প্রশ্ন থাকে যে, ডেঙ্গু টেস্ট নেগেটিভ হলেও ডেঙ্গু হতে পারে? এর উত্তর হলো, হতে পারে। সাধারণত জ্বরের শুরুর দিকে টেস্ট করালে ডেঙ্গু পজেটিভ আসে। জ্বর হওয়ার বেশ কিছুদিন পর টেস্ট করালে ডেঙ্গু নেগেটিভ আসতে পারে। আবার ডেঙ্গুর কিছু সেরোটাইপ বা প্রজাতি আছে যেগুলো টেস্টে নেগেটিভ আসে।
টেস্টে ডেঙ্গু নেগেটিভ আসার পরও যাদের মধ্যে ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো পাওয়া যায়, এমন রোগীদের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন।
পেস্ট কন্ট্রোল বাংলাদেশ দেশের শীর্ষ পেস্ট কন্ট্রোল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি বাসাবাড়ি ও অফিস এবং এগুলোর চারপাশ থেকে নিখুঁতভাবে মশা নির্মূল করে। তেলাপোকা, ইঁদুর, উইপোকা ও ছারপোকা নির্মূলেও দক্ষ কোম্পানিটি। বাসা ও অফিস মশামুক্ত রাখতে পারলে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমানো সম্ভব। ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে আপনি কি আপনার বাসা ও অফিস মশামুক্ত করতে চাচ্ছেন? তাহলে এখনই কোম্পানিটির হটলাইন নাম্বারে +8801713-155200 কল করুন।
সেবা পেতে যোগাযোগ করুনসচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
ডেঙ্গু রোগের প্রতিকার কি?
ডেঙ্গু রোগের প্রাথমিক প্রতিকার হলো পূর্ণ বিশ্রাম নেওয়া, বেশি বেশি তরল খাবার খাওয়া এবং প্যারাসিটামল খাওয়া। তবে জটিলতা বেড়ে গেলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। প্রয়োজন হলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।
এডিস মশা কীভাবে প্রতিরোধ করতে হবে?
বাসা ও অফিসের চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। নিয়মিত মশার স্প্রে করতে হবে। প্রতি তিনদিনে একদিন জমে থাকা পানি ফেলে দিতে হবে। এ কাজগুলো করার মাধ্যমে এডিস মশা প্রতিরোধ করতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর কীভাবে বিস্তার লাভ করে?
ডেঙ্গু এডিস মশার কামড়ে হয়ে থাকে। তাই বলা যায় এডিস মশার কামড় থেকেই ডেঙ্গু বিস্তার লাভ করে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
ডেঙ্গু কখন বিপজ্জনক?
ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ক্যাটাগরি রয়েছে। ক্যাটাগরি ‘এ’, ক্যাটাগরি ‘বি’ ও ক্যাটাগরি ‘সি’। ক্যাটাগরি ‘সি’-র ডেঙ্গু খুবই বিপজ্জনক।
ডেঙ্গুর প্লাটিলেট কত?
সাধারণত মানবদেহে প্রতি মিলিমিটার রক্তে দেড় লাখ থেকে চার লাখ পর্যন্ত প্লাটিলেট থাকে। ডেঙ্গু হলে প্লাটিলেটের সংখ্যা কমতে থাকে। প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে ১০ হাজারের নিচে এলে সেটা নিয়ে ভাবা যায়। এর উপরে থাকলে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।